মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সরকার চাইলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সবজি বীজের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। কিন্তু না করায় তারা ইচ্ছেমাফিক দাম নিচ্ছে। হাইব্রিড বীজ নাম দিয়ে সেগুলো বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলোর মান কেমন হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলছেন না। প্যাকেট খোলার সুযোগ নেই। কথাগুলো সাদুল্লাপুর উপজেলার তীলকপাড়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম স্বাধীনের। তাঁর ভাষ্য, দাম সহনীয় রাখতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
কৃষকরা এখন ব্যস্ত আগাম শীতকালীন সবজি ফলাতে। এতে বাড়তি দাম পাওয়া যায়। তবে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করছে না বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। সরকারি এ প্রতিষ্ঠান থেকে সাদুল্লাপুরে এখনও বীজ আসেনি। ফলে কৃষকরা বাজার থেকে চড়া দামে বীজ সংগ্রহ করছেন। এতে বাড়বে উৎপাদন খরচ। বাজারের বীজের ফলন নিয়েও সন্দিহান তারা।
ধান ও সবজির আবাদে মৌসুমে কৃষকরা আগে বিএডিসির বীজ খোঁজেন। তবে চাহিদামতো বীজ সরবরাহ করা যায় না বলে জানান সাদুল্লাপুর বাজারের বিএডিসি অনুমোদিত ডিলার নরেশ চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, এবার বিএডিসি শীতের সবজির বীজ সরবরাহ করেনি। গত মৌসুমে সরবরাহ ছিল চাহিদার ২৫ শতাংশ। বাড়তি দামে কোম্পানির বীজ বিক্রির সময় ফলনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয় না।
কৃষক আনোয়ারুল ইসলামের ভাষ্য, বিএডিসির বীজের দাম কম, ফলনের নিশ্চয়তা থাকে। কিন্তু কোম্পানির পণ্যের দাম বেশি। ডিলার নরেশ চন্দ্র সাহা জানান, গত মৌসুমে বিএডিসি বীজের সঙ্গে তুলনা করলে এবার কোম্পানির দামের বেশ ফারাক। উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, গত মৌসুমে প্রতি ১০০ গ্রাম বিএডিসির দেশি বেগুন বীজের দাম ছিল ৪০০ টাকা। এবার কোম্পানিগুলো তা ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। একইভাবে ৩৫০ টাকার টমেটো প্রায় ১০ হাজার টাকা, ৫০০ টাকার ফুলকপি ৪ হাজার, ৩০০ টাকার বাঁধাকপি ২ হাজার ৫০০, ২৫০ টাকার করলা ১ হাজার ৫০০, ১৫০ টাকার গাজর ৭০০, ৫০ টাকার মিষ্টি কুমড়া ২০০, ৫০ টাকার লাউ ১৫০, ২০ টাকার মুলা ১৫০ এবং ৩০ টাকার শিমবীজ ৬০ টাকায় বিক্রি করছে কোম্পানিগুলো।
মৌসুম ধরে নিজ বাড়িতে বীজ তৈরি করলে ফলন ভালো হয় বলে জানান অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া। সে তুলনায় বাজারের বীজে আশাতীত ফলন হয় না। এতে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, উপজেলায় বিএডিসির ১২ জন ডিলার আছেন। কিন্তু তারা কৃষকের চাহিদামতো বীজ দিতে না পেরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি করেন।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হবে সবজি। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে উৎপাদন হবে প্রায় ৬০ হাজার টন। এজন্য মাঠে নেমেছেন প্রায় ২৫ হাজার কৃষক। এরপর শুরু হবে আলুর মৌসুম। ফরিদপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, বাড়তি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। এতে সবজির দামও থাকবে বেশি।
এসব সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সরকারি সুবিধা নেই। কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এ মৌসুমে কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে সার-বীজ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে না। কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক আলী আজগর মিয়া বলেন, প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে সার-বীজ ও কীটনাশকের ব্যবস্থা থাকলে আবাদ বাড়বে।
বাড়ির আশপাশে পতিত জমি কিংবা ছাদে সবজি চাষ করা যায়। পাশাপাশি বস্তায় চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম। এতে আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাজারে সবজির ওপর চাপ কমবে। তিনি বলেন, নিজে উৎপাদিত সবজিতে পুষ্টিগুণ বেশি।
বিএডিসির গাইবান্ধা অফিসে স্টোর কিপারের দায়িত্বে থাকা উজ্জ্বল কুমার সরকার বলেন, শীত মৌসুমের জন্য বীজের সরবরাহ আসেনি। এবারের বরাদ্দ বন্যাদুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। আর বিএডিসির ডিলার সমিতির সাদুল্লাপুর উপজেলার সভাপতি আক্কাস আলীর ভাষ্য, বীজ না দিলেও বছর শেষে জমা দিতে হবে লাইসেন্স নবায়ন ফি।
কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওছার হাবিব বলেন, বাজার তদারক করা হয়েছে। দাম বেশি রাখার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।